সালাম দেয়ার ফযিলত

আস্সালামু আলাইকুম

আচ্ছালামু আলাইকুম


আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রশে করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর”। [সূরা নূর, আয়াত: ২৭]
আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন, “তবে তোমরা যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা নিজদের উপর সালাম করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ”। [সূরা নূর, আয়াত: ৬১]
আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন, -“আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে”। [সূরা নিসা, আয়াত: ৮৬]
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “তোমার কাছে কি ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে? যখন তারা তার কাছে আসল এবং বলল, সালাম, উত্তরে সেও বলল, সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক”। [সূরা জারিয়াত, আয়াত: ২৫, ২৬]
হাদিসের বাণী:
এক- আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামে কোন আমলটি সর্ব উত্তম? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, মানুষকে খানা খাওয়ানো এবং তুমি যাকে চিনো আর যাকে চিনো না সবাইকে সালাম দেয়া” । [বুখারি ও মুসলিম]।
দুই- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“আল্লাহ্ তা‘আলা আদম আ. কে সৃষ্টি করার পর বললেন, যাও! তুমি ঐ সব ফেরেশতার জামাত যারা বসে আছে তাদের সালাম দাও। তারা তোমাকে কি উত্তর দেয়, তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর। কারণ, তারা যা উত্তর দেবে তা হবে তোমার ও তোমার বংশধরদের সালাম। তখন আদম আ. গিয়ে ফেরেশতাদের বলল,
অর্থাৎ ‘তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক’ এর উত্তরে তারা বলল, ‘তোমার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক’ তারা উত্তর দিতে গিয়ে আল্লাহর রহমত শব্দটিকে বাড়াল” । [বুখারি ও মুসলিম]
তিন- আবু উমারা-আল বারা ইব্‌ন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাদের সাতটি বিষয়ে নির্দেশ দেন: রুগীকে দেখতে যাওয়া, জানাযার সালাতে অংশ গ্রহণ করা, হাঁচির উত্তর দেয়া, দুর্বলদের সাহায্য করা, অত্যাচারিত লোককে সহযোগিতা করা, সালামের প্রসার করা, শপথকারীকে মুক্ত করা” । বুখারি ও মুসলিম। চার- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলেয়ে দেব যা করলে, তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো বাসবে? তারপর তিনি বললেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর” । [মুসলিম] ।
পাঁচ- আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, হে মানব সকল! তোমরা সালামের প্রসার কর, মানুষকে খানা খাওয়াও, আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখ, আর মানুষ যখন ঘুমায়, তখন তুমি সালাত আদায় কর। তাহলে তুমি নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বর্ণনায় তিরমিযী । আর ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান ও সহীহ।
ছয়- তুফাইল ইব্‌ন উবাই ইব্‌ন কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত,
তিনি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর নিকট আসা যাওয়া করতেন। আর প্রায় সময় তাকে সাথে নিয়ে বাজারে যেতেন। তুফাইল বলেন, আমরা যখন বাজারে যেতাম আমি দেখতাম, আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ যত প্রকার ব্যবসায়ী, গরীব, মিসকিন ও টোকাইর নিকট দিয়ে অতিক্রম করত, সবাইকে সালাম দিত। একদিন আমি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর নিকট আসলে, তিনি আমাকে তার সাথে বাজারে যাওয়ার কথা বললে, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি বাজারে গিয়ে কি করবেন? আপনিতো কোন দোকানে বসেন না, কোন সামগ্রী সম্পর্কে কাউকে জিজ্ঞাসা করেন না, কোন কিছু দাম-ধর করেন না এবং বাজারের কোন অনুষ্ঠানেও শরিক হন না। আমি আপনাকে বলি, আমাদের নিয়ে এখানে বসেন আমরা আলাপ করি। [কিন্তু আপনি তো তা করেন না] তখন তিনি আমাকে বললেন, “হে পেট ওয়ালা! (আবু তুফাইলের পেট বড় ছিল) আমি বাজারে গমন করি সালাম দেয়ার উদ্দেশ্যে। যার সাথে আমি সাক্ষাত পাই তাকেই সালাম দেই”। ইমাম মালেক মুয়াত্তাতে হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেন।
সালাম কিভাবে দেবে?
যে সালাম দেবে, তার জন্য মোস্তাহাব হল, « বলা। অর্থাৎ, তোমাদের উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। এখানে বহুবচন অর্থাৎ, ‘তোমাদের’ শব্দ ব্যবহার করা সুন্নত। যদিও যাকে সালাম দেবে, সে একা বা একজন হয়। এটাই উত্তম। আর সালামের উত্তর দাতা বলবে, “و” অর্থাৎ, তোমাদের উপরও শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। উত্তর দেয়ার সময় و. বলবে। এখানে و [ওয়াও] নিয়ে আসবে।
এক- ইমরান ইব্‌ন হুছাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« “এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর নিকট এসে বলল, « রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার সালামের উত্তর দিলে লোকটি বসল। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলল “দশ”। তারপর অপর এক ব্যক্তি এসে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার সালামের উত্তর দেয়ার পর লোকটি বসল। তার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, “বিশ”। তারপর অপর এক ব্যক্তি এসে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার সালামের উত্তর দিয়ে বলল, “ত্রিশ”। বর্ণনায় আবু-দাউদ ও তিরমিযী। ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।
দুই- আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাকে বলেন, ‘এ হল, জিবরীল তোমাকে সালাম দিয়েছে’। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ বলেন, আমি বললাম, “তার উপর সালাম রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক”। [বুখারি ও মুসলিম] বুখারি ও মুসলিমের বিভিন্ন বর্ণনায় এ রকমই বর্ণিত। তবে কোন কোন বর্ণনায় “و” কে বাদ দেয়া হয়েছে। তবে উভয় বর্ণনাতে কোন অসুবিধা নাই। কারণ, নির্ভরযোগ্যদের বর্ধিত করণ গ্রহণযোগ্য।
তিন- আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ যখন কোনো বিষয়ে কথা বলতেন, তিনবার বলতেন, যাতে তার কথা স্পষ্ট হয়। আর যখন কোন কাওমের কাছে আসতেন, তাদের তিনি তিনবার সালাম দিতেন” । বর্ণনায় বুখারি। (তিনবার সালাম দেওয়ার) বিষয়টি তখন প্রযোজ্য, যখন সে কাওমের লোক বেশী হয়।
চার- মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর স্বীয় বর্ণনায় বর্ণিত, দীর্ঘ হাদিসটিতে তিনি বলেন,
“আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর জন্য তার দুধের ভাগটি তুলে রাখতাম। তিনি রাতে এসে এমনভাবে সালাম দিতেন, যাতে কোনো ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগত না, তবে যারা জাগ্রত তারা তার সালাম শুনতে পেত। একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাদের মাঝে আসলেন এবং তিনি এসে যেভাবে সালাম দেয়ার সেভাবে সালাম দিল” । বর্ণনায় মুসলিম।
পাঁচ- আসমা বিনতে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ মসজিদের ভিতরে এক দল নারীর মজলিস দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি তাদের সালাম দিলেন এবং হাত দিয়ে ইশারা করলেন”। বর্ণনায় তিরমিযী । এবং তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান।
এ হাদিসটির অর্থ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ মুখে উচ্চারণ ও ইশারা দুটিই করেন। আবু-দাউদ এর বর্ণনা এ অর্থটি সমর্থন করে। কারণ, তাতে বলা হয়, “‘তিনি আমাদের সালাম দেন’।
ছয়: আবু জুরাই আল হুজাইমী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে এসে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল তোমার উপর সালাম’। তিনি বললেন, ع বলবে না, কারণ, মৃত লোকের অভিবাদন” । বর্ণনায় তিরমিযী ও আবু-দাউদ; ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান ও সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন এবং পুরো হাদিস উল্লেখ করেন ।
সালামের আদব
এক- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
আরোহী ব্যক্তি পায়ে হাটা ব্যক্তিকে সালাম দেবে আর পায়ে হাটা ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। আর অল্প ব্যক্তি বেশি ব্যক্তিকে সালাম দেবে। বুখারি ও মুসলিম । বুখারির অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, ছোটরা বড়দেরকে সালাম দেবে।
দুই- আবু উমামা ছুদাই ইব্‌ন ‘আজলান আল বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, “আল্লাহর নিকট সর্ব উত্তম ব্যক্তি সে, যে মানুষকে আগেই সালাম দেয়”। বর্ণনায় আবু-দাউদ উত্তম সনদে। ইমাম তিরমিযী আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! দুইজন ব্যক্তির মধ্যে যখন সাক্ষাত হবে, তখন কোন লোকটি প্রথমে সালাম দেবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, ‘তাদের দুই জনের মধ্যে যে আল্লাহর অধিক কাছের লোক সে আগে সালাম দেবে’। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ।
একাধিক বার সালাম দেয়া–যার সাথে বার বার দেখা হয়, তাকে একাধিক বার সালাম দেয়া মোস্তাহাব। যেমন, একজন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করল, তারপর ঘর থেকে বের হল। তারপর একই সময় আবার প্রবেশ করল। অথবা উভয়ের মাঝে গাছ বা অন্য কিছু আড়াল হল, তারপর আবার দেখা হল, তখন একজন অপর জনকে পুনরায় সালাম দেবে।
এক- সালাতে ত্রুটি-কারী সাহাবীর হাদিসে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“লোকটি আসল, অত:পর সে সালাত আদায় করল, তারপর সে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে আসল এবং সালাম দিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তার সালামের উত্তর দিলেন এবং বললেন, “তুমি যাও সালাত আদায় কর, কারণ, তুমি সালাত আদায় করনি”। তারপর লোকটি আবার আসল, এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কে সালাম দিল। এভাবে লোকটি তিনবার আসা যাওয়া করল। [বুখারি ও মুসলিম ]
দুই- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“তোমরা যখন তোমার অপর ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করবে, তাকে সালাম দেবে। যদি তারা গাছ, দালান বা পাথরের আড়াল হয়, তারপর পুনরায় দেখা হয়, তাহলেও যেন তোমরা তাকে আবার সালাম দাও”। বর্ণনায় আবু-দাউদ ।

Related Post