দোয়াও ইবাদত

images[2]দোয়া মানে ডাকা। দোয়া মানে মহান প্রভু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে বান্দার প্রার্থনা। ইহকালীন ও পরকালীন সুখ-শান্তির জন্য, বিপদ থেকে মুক্তির জন্য এবং সার্বিক কল্যাণের জন্য মানুষ আল্লাহর কাছে দোয়া করে থাকে। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই কুরআন শরিফে বলে দিয়েছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো’ (মুমিন : ৬০)।

 দোয়া হচ্ছে বন্দিগি ও দাসত্ব প্রকাশের চূড়ান্ত মাধ্যম। রাসূলে কারিম সা: যে বিশেষ কিছূ গুণে গুণান্বিত ছিলেন, এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ হচ্ছে আল্লাহর গোলামি ও দাসত্ব। মানুষকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত ও দাসত্ব করার জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষ ও জিন জাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’ (জারিয়াত : ৫৬)। সঙ্গত কারণেই যে যত বেশি আল্লাহর দাসত্ব করতে পারবে, তার ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির উদ্দেশ্য ততই পূর্ণতা পাবে। রাসূলুল্লাহ সা: সর্বকালের সকল মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী। মহান সৃষ্টিকর্তার দাসত্ব তিনি সবচেয়ে বেশি পালন করেছেন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন। সর্বশেষ নবী ও রাসূল ছিলেন। সব নবী ও রাসূলের সর্দার ছিলেন। কিন্তু এত সব বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে জায়গায় জায়গায় তাঁকে গোলাম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মানবজাতির মাঝে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ মিরাজের সম্মানে ভূষিত করেছিলেন। এক রাতে পবিত্র মক্কা নগরী থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসে নিয়ে যাওয়া, সেখান থেকে সপ্ত আকাশ পাড়ি দিয়ে সরাসরি আল্লাহর দিদার লাভ করা এবং সব শেষে আবার সেই রাতেই নিজের ঘরে ফিরে আসা  এমন কোনো ঘটনা মানব ইতিহাসে একমাত্র তাঁর জীবনেই ঘটেছিল। অথচ আল্লাহ তায়ালা এমন মহান ঘটনাটির বিবরণ দিচ্ছেন এভাবে ‘মহান সেই সত্তা যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলা মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায় নিয়ে গেলেন’(বনি ইসরাইল :১

 এ থেকেই আন্দাজ করা যায়, মহান প্রভুর গোলামি ও দাসত্বের পূর্ণতার মধ্যেই নিহিত একজন মানুষের পরিপূর্ণ সফলতা। নামাজ রোজা হজ জাকাত ইত্যাদি আমলের মাধ্যমে মানুষ তার প্রভুর ইবাদত ও দাসত্ব করে থাকে। কিন্তু দাসত্বের পূর্ণ রূপ প্রকাশ পায় দোয়ার মধ্য দিয়েই। হয়তো নিজের কোনো প্রয়োজনে কিংবা পরকালীন মুক্তির আশায় মানুষ যখন প্রভুর সামনে হাত তুলে দোয়া করতে থাকে, কান্নাকাটি করতে থাকে, তখন তার ভেতর বাইর সবই আল্লাহর গোলামিতে ডুবে থাকে।

 রাসূলুল্লাহ সা: বেশির ভাগ সময়ই এ দোয়ার ভেতর দিয়েই কাটাতেন। তাই বলা যায়, দোয়া মুমিনের গোলামিকে পূর্ণতা বিধান করে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, দোয়াই ইবাদত। অর্থাৎ নামাজ রোজা হজ জাকাতের মতো দোয়াও একটি ইবাদত। তাই আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চেয়ে দোয়া করার পর সে দোয়া কবুল হলে তো ভালো। কিন্তু যদি কবুল নাও হয়, তাহলেও এর সওয়াব পাওয়া যাবে। যেহেতু দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। এর সওয়াব ও প্রতিদানের সাথে তা কবুল হওয়া বা না হওয়ার কোনোই সম্পর্ক নেই। কেউ যদি কোনো মানুষের কাছে কিছু চায়, তাহলে সে বিরক্ত হয়, নাখোশ হয়। কিংবা প্রথম এক-দুইবার খুশিমনে দিলেও পরে তার অবস্থা পাল্টে যায়। কিন্তু আল্লাহর কাছে কিছু না চাইলে বরং তিনি অসন্তুষ্ট হোন। বান্দা তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে, চাইবে। আর তিনি বান্দার প্রার্থনা শুনবেন। সে প্রার্থনায় সাড়া দেবেন। এতেই তিনি সন্তুষ্ট। বরং তাঁর কাছে যে বান্দা যত বেশি চায় তার ওপর তিনি তত বেশি খুশি হোন। হাদিস শরিফে আছে, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে প্রিয় কোনো কিছু নেই’ (তিরমিজি শরিফ)। আরেক হাদিসে আছে, ‘যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার ওপর অসন্তুষ্ট হন’ (প্রাগুক্ত)। আরেকটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। কেননা তিনি তাঁর কাছে কিছু চাওয়াকে পছন্দ করেন।

Related Post