সালামের ফজিলত

428825_3327635549804_1016446865_n[1]ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবরা পরস্পর সাক্ষাৎ হলে ‘হাইয়াকাল্লাহ’ বা ‘বারাকাল্লাহ’ প্রভৃতি সম্ভাষণে সালাম করত। ইসলাম এসে সালামের পদ্ধতি পরিবর্তন করে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলার রীতি প্রচলন করে; যার অর্থ তুমি সর্বপ্রকার কষ্ট ও বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকো। ইবনে আরাবি (রহ:) আহকামুল কুরআন নামে গ্রন্থে লিখেন, ‘সালাম’ শব্দটি আল্লাহর নামগুলোর মধ্যে অন্যতম।’ পৃথিবীতে অন্যান্য সভ্যসমাজ পরস্পর সাক্ষাৎকালে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি প্রকাশ করে যেসব বাক্য ব্যবহার করে থাকেন তাদের সেই বাক্যের তুলনায় ইসলামের সালাম হাজারো গুণে উত্তম। কেননা তাদের সেসব বাক্যে কেবল প্রীতি লেনদেন হয়,

 আর ইসলামের সালাম ও তার জওয়াবে প্রীতিবিনিময়ের সাথে সাথে দুয়াও করা হয়। এ জন্য মহান আল্লাহ সালামের গুরুত্ব বর্ণনা করে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘সালামকারী সালামের মাধ্যমে যেরূপ শব্দ ব্যবহার করবে তার চেয়ে উত্তমরূপক্ষে  তুমি জওয়াব দেবে অথবা অনুরূপ শব্দই বলে দেবে।’ (সূরা  নিসা : ৮৬ আয়াত)। সুতরাং এর দ্বারা বোঝা গেল যে, কোনো ব্যক্তি সালাম দিলে তার জওয়াব দেয়া ওয়াজিব, আর তার সাথে রহমত বরকত ইত্যাদি শব্দ বলে উত্তর দেয়া মুস্তাহাব। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা:) থেকে বর্ণিত হুজুর সা:-এর দরবারে এক লোক এসে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে বসে পড়ল। হুজুর সা: তার উত্তর দিয়ে বললেন, সে দশটি নেকি পক্ষে য়েছে। তারপর আরেকজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বলে বসে গেল। হুজুর সা: তার উত্তর দিয়ে বললেন, সে বিশটি নেকি পক্ষে য়েছে। অতঃপর আরেকজন লোক এসে ‘আসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ পর্যন্ত বলে বসে গেল। রাসূল সা: তার উত্তর দিয়ে বললেন, সে ৩০ নেকি পক্ষে য়েছে; আবু দাউদ হাদিস নম্বর ৫১৯৫, তিরমিজি ২৬৯০। হজরত মায়াজ ইবনে আনাস রা: থেকে বর্ণিত চতুর্থ এক ব্যক্তি এসে ওয়া বারাকাতুহুর শেষে ‘ওয়া মাগফিরাতুহ’ বলে বসে গেলেন, হুজুর সা: তার উত্তর দিয়ে বলেন, সে ৪০টি নেকি পক্ষে য়েছে।

আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা: সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর পরস্পর মহব্বত না করা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না আমি কি তোমাদের এমন কথা বলে দেব যা দিয়ে তোমাদের পরস্পরে মহব্বত বৃদ্ধি পাবে? তা হচ্ছে পরস্পর সাক্ষাৎ হলে সালামবিনিময় করা এবং সালামের ব্যাপক প্রসার করা। (মুসলিম-৫৪) (আবু দাউদ-৫১৯৩) তিরমিজি-২৬৮৯)। যে সালামের এত গুরুত্ব ও ফজিলত, তা আজ আমাদের কাছে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আমরা অনেকেই আসসালামু আলাইকুম বলার পরিবর্তে সামু আলাইকুম বলি। আর অনেকে তো সালাম দিতেই চায় না। মনে করে আমি তার চেয়ে বড় ও সম্মানিত। আমি তাকে সালাম দেব কেন? বরং সে-ই আমাকে সালাম দেবে। হায় আফসোস! যেখানে মহানবী সা: নিজেই ছোটবড় সবাইকে সালাম দিতেন, সেখানে আমাদের একি দৃষ্টিভঙ্গি? আমরা কি তার চেয়ে বেশিক্ষা সম্মানিত হয়ে গিয়েছি?এ আমাদের কেমন চারিত্রিক অবক্ষয়। আমরা যদি তাঁর প্রকৃত অনুসারী হয়ে থাকি তাহলে আমাদের উচিত তাঁর আদর্শকে আঁকড়ে ধরা, ছোট বড়, ধনী-দরিদ্র, পরিচিত-অপরিচিত সবাইকেই সালাম দেয়া।

প্রিয় পাঠক, এখানে সালামের ব্যাপারে আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি। আমার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। যেকোনো কারণবশত তার সাথে আমার একটু কথাকাটাকাটি হয়। যার কারণে সে আমার সাথে কথা বন্ধ করে দেয়। আমি নিজে এবং অন্যদের নিয়ে তার রাগ ভাঙার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। তখন আমি ভাবতে লাগলাম কী করে তার রাগ ভাঙানো যায়। তখন আমার স্মরণ হলো রাসূল সা:-এর সেই বাণী  সালাম মহব্বত সৃষ্টি করে। অতঃপর কোনো একদিন মাগরিবের পূর্বক্ষণে তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম দিলাম। সালাম শুনে মুচকি হেসে সে তার উত্তর দিলো। এভাবে সালাম  দেয়া-নেয়ায় আস্তে আস্তে তার সাথে আমার আগের চেয়েও বেশিক্ষা সখ্য গড়ে ওঠে। তখন মনে মনে ভাবলাম, আল্লাহর বাণী ও তার রাসূলের আদর্শেই রয়েছে আমাদের সব সমস্যার সমাধান। আসলে সালাম এমন একটি আমল যার প্রভাব মৃত্যুর পরেও বাকি থাকে। মহানবী সা: বলেন, হে বৎস, তুমি যখন নিজের ঘরে প্রবেশ করবে তখন সালাম দেবে। কেননা এটি তোমার জন্য ও ঘরে অবস্থানকারীদের জন্য বরকতের কারণ হবে। সুতরাং আমাদের অধিক পরিমাণ সালাম বিনিময় করা উচিত।= সমাপ্ত=

Related Post