মুসলিম সমাজের কমন শিরক ও বিদাআত

   ১ম পাঠ

মুসলিম সমাজের কমন শিরক ও বিদাআত

মুসলিম সমাজের কমন শিরক ও বিদাআত

আমাদের সমাজে এই শিরক ও বিদাআত গুলো বিরাজমান , এ গুলো থেকে তওবা না করে মরলে বড়ই বিপদে পড়তে হবে মৃত্যুর পরে , শয়তান চায় আল্লাহর বান্দা তওবা না করে মারা যাক আপনি কি চান না আপনার ভাই বোনেরা তওবা করুক , যদি চান তাহলে তাদেরকে আজই জানিয়েই দিন। শিরক ও বিদাআত আল্লাহ কখনই মাফ করবে না।

১. বৌ ভাত, গায়ে হলুদ, জন্মদিন, নববর্ষ অনুষ্ঠান বিদআত

এগুলো টাকার অপচয় ,আল্লাহ আমাদের খুশির ও আনন্দের জন্য ২টি ঈদ দিয়েছেন আর আমরা চিন্তা করি কি করে আরো খুশির ও আনন্দের দিন আমাদের মাঝে আনা যায় – নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে গুলো আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন তারমধ্যে নতুন কিছু যুক্ত করা বিদআত ।  আমরা যদি ৯৫% ইসলাম মেনে চলি আর ১% থেকে  ৫% অন্য কোন ধর্ম থেকে নিয়ে মেনে চলি তাহলে এইটা আর ইসলাম থাকে?

সুরা আল ইমরান  ১৪৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন – হে মানুষ ,তোমরা যারা (আল্লাহর উপর) ঈমান এনেছো,তোমরা যদি অমুসলিমদেরদের অনুসরণ করতে শুরু করো তাহলে এরা তোমাদের পূর্ববর্তী (জাহেলিয়াতের) অবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ফলে তোমরা নিদারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।

সুরা বাকারা  ২৭০ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন – তোমরা যা কিছু খরচ করো আর যা কিছু মান্নত করো আল্লাহ তা নিশ্চয়ই জানেন ,যালেমদের কোন সাহায্যকারী নাই।

তিরমিযী শরীফ -কিয়ামত অধ্যায় -২৩৫৮ নং হাদিস -মাসুউদ রা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোজ কিয়ামতে পাঁচটি বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে তার একটি হল: তুমি তোমার ধন সম্পদ কোথা থেকে আয় করেছো এবং কোন খাতে ব্যবহার করেছো?

মেশকাত শরীফ -৬ষ্ট খন্ড -৩০৭৩ নং হাদিস -আনাস (রাঃ) বলেন নবী (সাঃ)  যয়নবের বিয়েতে যত বড় বিবাহ ভোজ করেছেন তা অন্য কোন বিবির জন্য করেননি,তাতে তিনি একটা ভেড়া দিয়ে বিবাহ ভোজ করিয়েছেন ।

অতএব বিবাহের সময় অনুষ্ঠান বা  বিবাহ ভোজ একটা (যে পক্ষই অনুষ্ঠান করুক বা উভই পক্ষ একত্রে অনুষ্ঠান করুক) এগুলো বিদআত কেন – নবী সাঃ এর সময় লোকজন বিয়ে করেছে ও নবী সাঃ অনেকের বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবৌ ভাত ,গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান করেনি এজন্য এগুলো বিদআত (নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের নামায পড়েছেন ৩ রাকাত এখন আপনি কি ৪ রাকাত নামায পড়বেন মাগরিবে? তিনি বিয়ের নিয়ম আমাদের বলে দিয়ে গেছেন?)

মেশকাত শরীফ-৬ষ্ট খন্ড -৩০৮০ নং হাদিস আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত -নবী সাঃ বলেছেন সর্বাপেক্ষা মন্দ সে অলীমার ভোজ (বিবাহ ভোজ) যাতে ধনীদের দাওয়াত করা হয় আর গরীবদের বাদ দেওয়া হয়।

আমাদের উচিৎ যাদের বিবাহ ভোজে যাচ্ছি তাদের জন্য দোয়া করা। সেইটা অধিকাংশ লোকই আমরা করি না। গিফট না নিয়ে গেলে মান সম্মান থাকবে না অথচ গিফট বিবাহ ভোজের অংশ না ,দোয়া বিবাহ ভোজের অংশ।(গিফট দেওয়া যাবে না তা না , কিন্তু আমাদের দোয়া করা উচিৎ)

২ -মিলাদ ও মৃত্যুর পর চল্লিশা পালন বিদআত

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় লোকজন মারা গেছে কিন্তু তিনি কখনও কারও জন্য মিলাদ বা ৪০ দিন পরে কোন অনুষ্ঠান করেননি । মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করেন,যা করলে আপনার পিতা মাতার ভাল হবে এটাই আমরা করি না ।

 

৩ -ঈদে মিলাদুন্নবী বিদআত (মিলাদ-জন্মের সময় বা কাল)

জন্মঅস্টমী (হিন্দু) , বড়দিন (খ্রিস্টান),মিলাদুন্নবী একই কথা একই কাজ

সুরা আল ইমরান  ১৪৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন – হে মানুষ ,তোমরা যারা (আল্লাহর উপর) ঈমান এনেছো,তোমরা যদি অমুসলিমদেরদের অনুসরণ করতে শুরু করো তাহলে এরা তোমাদের পূর্ববর্তী (জাহেলিয়াতের) অবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ফলে তোমরা নিদারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের (মৃত্যু) ইন্তেকালের পর কোন সাহাবী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান করেনি । তাহলে আমরা করছি কেন? সাহাবীরা কি ভুল করে গেছেন? এ থেকে মানুষ  শিখেছে নিজের,ছেলে মেয়ের জন্মদিন পালন। আরো লোক আছে তাদের জন্মদিন কেন পালন করছেন না? (সাহাবীরা,বাকি নবী-রাসুলরা কি দোষ করেছেন তাদের নাম তো আল্লাহ কোরআনে উল্লেখ করেছেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন কয় রাকাত নামায পরেছেন ? ঈদের দিনতো  মানুষ ২ রাকাত নামায পড়ে থাকে?

টাকার অপচয় ;

কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ভাই! আপনি কেন মিলাদুন্নবী পালন করেন? উত্তরে সে বলে আমরা মিলাদুন্নবী করি কারণ, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসি। আপনি যে টাকা মিলাদুন্নবীর দিন খরচ করছেন এইটা কি ঠিক? আল্লাহ বলেছেন আল্লাহর পথে খরচ করতে (দান করেন?)। মিলাদুন্নবী এসেছে মিশরের শিয়া থেকে। যারা মিলাদুন্নবী করে তাদের চিন্তা দ্বীন পূর্ণাঙ্গ না তারা দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করার অযথা চেষ্টা করছে। কিন্তু আল্লাহ বলছেন,  আমি তোমাদের জন্য দ্বীন কে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম।

যেটা করা উচিৎ সেইটাই আমরা করি না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অতিরিক্ত সালাত (দুরুদ) পাঠ করেন প্রতিদিন। যা তিনি আদেশ করে গেছেন।

৪ -বিবাহ বার্ষিকী পালন করা বিদআত

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহ করেছেন কিন্তু কখন ও বিবাহ বার্ষিকী পালন করেনি এবং সাহাবীরাও করেনি ।

আল্লাহর নিয়ামত গুলোকে আমরা ভাল কাজে ব্যবহার করি,

সহী মুসলিম-৫৬৯৮ নং হাদিস -আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত -নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন -আল্লাহ বলেন আদম সন্তান যুগ ও সময়কে গালি দেয় ,অথচ এ গুলো আমিই নিয়ন্ত্রণ করি এবং পরিবর্তন করি।

সুরা আস ছাফফাত ৯৬ নং আয়াত -আল্লাহ বলছেন – আল্লাহ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং (সৃষ্টি করেছেন) তোমরা যা কিছু বানাও তাও।

তিরমিযী শরীফ হাদীস নং ১৯৮৮ – ইবনে সারিফ রাঃ থেকে বর্ণিত কিছু সাহাবী বললেন আমরা কি রোগীর চিকিৎসা করব না? আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেছেন অবশ্যই চিকিৎসা করবে।

পূর্বে মানুষরা  রোগ নিরাময়ের জন্য ডাক্তারের কাছে যেত এখনও মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য ডাক্তারের কাছে যায় কিন্তু এখন চিকিৎসা অনেক উন্নত এবং রোগও বেশী। রোগ বেশী বলেই ঔষধ ও যন্ত্রাংশ বেশী।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সময় এ মানুষেরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়েছে উটে বা পায়ে হেঁটে আর এখন আমরা যাচ্ছি বাসে,প্লেনে,গাড়িতে স্বল্প সময়ে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সময় মানুষেরা এক স্হান থেকে অন্য স্হানে খবর পাঠিয়েছে লোকদের মাধ্যমে আর আমরা এখন খবর পাঠাচ্ছি মোবাইল বা মেইল এর মাধ্যমে অল্প সময়ে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় টিভি , ডিশ , ইন্টারনেট ছিল না। টিভি , ডিশ , ইন্টারনেট এগুলো সংবাদ পাঠানোর একটি মাধ্যম ।এগুলোর আবিস্কার হয়েছে দুনিয়ার যে কোন প্রান্তের খবর অল্প সময়ে আপনার কাছে পাঠানোর জন্য। কিন্তু আমরা কি করছি? আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খবর মানুষের কাছে না পৌঁছে অমুসলিমদের খবরটা নিচ্ছি এবং রীতিমত তাদেরটা ভাল মনে করে সেগুলো করছি।

একই কাজ আমরা করছি স্বল্প সময়ের মধ্য ,যেহেতু এগুলো ইবাদত হিসেবে করা হয় না  তাই এগুলো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত না।

৫। মাদ্রাসা বা এতিমখানা বিদআত না কেন?

মাদ্রাসা – যে স্থানে মানুষদের কুরআন ও হাদীস শিক্ষা দেওয়া হয় । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা এতিমদের দেখ এজন্য এইটা বিদআত না।

৬। তাবলীগ করা কি বিদায়াত?

তাবলীগ করা বিদআত না কারন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় দূর দূরান্তের থেকে মানুষরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সাহাবীদের কাছে এসেছে ইসলাম জানার জন্য। আপনিও তো একই কাজ করছেন আপনার সামর্থের মধ্য তাবলীগ করতে ,ইসলাম কে জানতে।

সুরা মায়েদা ৬৭ নং আয়াত আল্লাহ বলেছেন – হে রাসুল – যা কিছু তোমার উপর নাযিল করা হয়েছে তা তুমি অন্যর কাছে পৌঁছে দাও, যদি তুমি তা না করো তাহলে তুমি তো মানুষদের তার (আল্লাহর) বার্তা পৌঁছে দিলে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষের (অনিষ্ট) থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কখনও কোনো অবাধ্য জাতিকে পথ প্রদর্শন করেন না। চলবে

Related Post